ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চারদিকে সবাই যখন কালী শক্তির আরাধনা (Kalipuja 2024) ও আলোর উৎসবে মেতে ওঠে। ঠিক তখনই এক প্রকার নিঃশব্দেই দেবী দুর্গার আরাধনা করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পাটরাপাড়ার রক্ষিত পরিবার। গত ২০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে এখানে দীপান্বিতা অমাবস্যায় শুরু হয় দেবী দুর্গার বোধন। মা এখানে অসুরবিনাশিনী নন, নন সিংহবাহিনীও। এখানে তিনি ঘরের মেয়ে উমা। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আর শিব সহ দুর্গা সপরিবারে পূজিত হন এখানে।
জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে রক্ষিত বংশের কোনও এক সদস্যকে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দেন। যেখানে দেবী দুর্গা, শিব সহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের মূর্তি তৈরী করে পুজোর নির্দেশ পান। শারদীয়া দুর্গোৎসবের মতোই এখানে টানা চারদিন পুজো হয়। শুরুর দিন চাল কুমড়ো বলি প্রথাও চালু আছে রক্ষিত বাড়ির পুজোতে।
আরও পড়ুন: পুজোয় লাগেনা পুরোহিত, নেওয়া হয়না দক্ষিণা! চলছে ৪৫ ফুট বড়মার আরাধনা
২০০ বছর পূর্বে রক্ষিত পরিবারের পূর্ব পুরুষদের পুরুলিয়াতে রেশম গুটির ব্যবসা ছিল। জঙ্গল থেকে তসরের এই গুটি সংগ্রহ করত রক্ষিত পরিবারের তৎকালীন সদস্যরা। একদিন রক্ষিত পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ জঙ্গলে গুটি সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। গভীর জঙ্গলে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে সেখানেই একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। তখন দেবী মা তাকে স্বপ্নাদেশ দেন তাদের গ্রামের বাড়ি অর্থাৎ বিষ্ণুপুরে মা দুর্গাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মায়ের সাথে বিরাজ করবে দেবাদিদেব মহাদেব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ।
আরও পড়ুন: এখানেই রয়েছে সতীর দক্ষিণ স্কন্ধ, পরতে পরতে ইতিহাসে মোড়া রত্নাবলী কালীপুজো
আরও পড়ুন: সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরের হাতে পুজোর সূচনা! আজও ঐতিহ্য মেনে পুজো হয় বন্দর কালীবাড়িতে
স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়ি ফিরে এসে তাদের তাঁত সালে দেখে মা যেভাবে তাকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিল সেভাবেই একটি মূর্তি রয়েছে। তখন থেকে শুরু হয় রক্ষিত পরিবারে কালীপুজোর দিনে দুর্গাপুজো। এখানে রীতি রয়েছে মাকে যেহেতু ঘরের মেয়ে রূপে পুজো করা হয়। ভাইফোঁটার পরে মাকে বিসর্জন করা হয়। কারণ ভাইফোঁটার পরে ঘরের মেয়েরা ঘরে ফিরবে এবং মা ও তার সাথে ঘরে ফিরবে এটাই রীতি এটাই নীতি। মায়ের ঘট বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা কেউ বিষ্ণুপুর ছেড়ে যান না। শারদীয়া পুজোর পরিবর্তে তাদের বাড়ির পুজোয় আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ করা হয়। তাই এসময় পরিবারে আসেন সকলে।