ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের আঁচ পড়তে পারে রাজ্য বিধানসভার (WB Assembly) শীতকালীন অধিবেশনে। সোমবার অধিবেশন শুরুর দিনেই সেই ইঙ্গিত মিলেছে। ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় (WAQF BILL TMC PROTEST) এবার নয়া কর্মসূচি ঘোষণা করল তৃণমূল। আগামী শনিবার, ৩০ নভেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলকে (TMC Minority Cell) বড় সমাবেশ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ৩০ নভেম্বর রানি রাসমণি রোডে (RANI RASHMONI ROAD) এই সভা হবে। কিন্তু প্রশ্ন ভারতে প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল (Waqf Amendment Bill 2024) নিয়ে কেন এই বিরোধিতা?
‘ওয়াকফ’ কথার অর্থ কি? (WAQF BILL TMC PROTEST)
ওয়াকফ বলতে ইসলামী আইনের অধীনে শুধুমাত্র ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা সম্পত্তিকে বোঝায়, সেই সম্পত্তির অন্য কোন ব্যবহার বা বিক্রয় নিষিদ্ধ (WAQF BILL TMC PROTEST)। ওয়াকফ পরিচালনার জন্য ওয়াকিফ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একজন ‘মুতাওয়াল্লি’ নিয়োগ করে। একবার কোন সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে মনোনীত হয়ে গেলে, মালিকানা অপরিবর্তনীয় থাকে।
‘ওয়াকফ’ ধারণার উৎপত্তির ইতিহাস (WAQF BILL TMC PROTEST)
ভারতে, ওয়াকফের ইতিহাস দিল্লি সালতানাতের শুরুর দিনগুলিতে দেখা যায়, যখন সুলতান মুইজুদ্দিন সাম ঘোর মুলতানের জামে মসজিদের পক্ষে দুটি গ্রাম উৎসর্গ করেছিলেন এবং তারপর প্রশাসন শাইখুল ইসলামের হাতে তুলে দিয়েছিলেন (WAQF BILL TMC PROTEST)। পরবর্তীতে ইসলামি রাজবংশের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯১৩ সালের মুসলিম ওয়াকফ বৈধকরণ আইন ভারতে ওয়াকফের প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করেছিল। এরপর থেকে ওয়াকফ রোধের কোনো চেষ্টা করা হয়নি।
আরও পড়ুন: Waqf Amendment Bill: বঙ্গ বিধানসভায় কেন্দ্রের ওয়াকফ ইস্যু, বিরোধিতায় পথে নামছে তৃণমূল
ভারতে প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে কেন বিতর্ক?
ইসলামি আইনের ভিত্তিতে তৈরি ওয়াকফ জমির মালিকানা এবং সেই জমির ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। জমি দানের ধারণাটি মহৎ হলেও বাস্তবে তা নিয়ে তৈরী হয়েছে একাধিক বিতর্ক। বারংবার জমি নিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থাপনা এবং অবৈধ দাবির অভিযোগ উঠেছে। সারা ভারত জুড়ে হাজার হাজার সম্পত্তি,ব্যক্তিগত জমি, রিয়েল এস্টেট – এইসবই ওয়াকফের সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যথাযথ নথিপত্র অথবা যাচাই ছাড়াই তা কবজা করা হয়েছে। অনেকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও তাদের অজ্ঞাতসারেই ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে পরে সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত আইনি লড়াই চলেছে।
বছরের পর বছর ধরে এমন দাবি আরও বেড়েছে এবং জমি দখলের জন্য ওয়াকফ কমিটির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এই বিতর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল ওয়াকফের অধীনে থাকা জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার। ওয়াকফের জমি সমাজ সেবামূলক কাজে ব্যবহারের কথা , কিন্তু বিভিন্ন অসাধু উপায় অবলম্বন করে তা থেকে মুনাফা লাভের চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময় এটাও দেখা গিয়েছে যে ওয়াকফের জমি বাণিজ্যিক কারণে বেসরকারিকরণ হয়ে গিয়েছে। ফলে যা দাতব্য সম্পত্তি ছিল, তা এখন মোটা টাকা আয়ের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়াকফ আইনে বিজেপির সংস্কার উদ্যোগ
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলিকে সমাধান করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিলে আইন আরও জোরদার করা হবে, স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং ওয়াকফের সম্পত্তি যাতে অপব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। এই সংশোধনীর মূল ভাবনা ওয়াকফের জমিকে যাতে সঠিক কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে ওয়াকফ বিলের সংশোধনী নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তাদের দাবি, এই সংশোধনী বিল এনে সরকার তাদের ধর্মীয় অধিকারে আঘাত হানতে চাইছে এবং ঘুরপথে তাদের জমি হস্তগত করতে চাইছে।
আরও পড়ুন: TMC Working Committee Meeting: কর্মসমিতির বৈঠকে মুখোমুখি অনুব্রত-মমতা, সাংগঠনিক রদবদলে জল্পনা
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় তৃণমূল
২০২৬ সালে বাংলায় পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে চলেছে মুসলিম ভোট। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সিংহাসন বাঁচাতে বড় ভূমিকা নিয়েছে মুসলিম ভোট। এই ভোট যাতে হাতছাড়া না হয়, সে বিষয়ে সদা সতর্ক রাজ্যের শাসক দল। ওয়াকফ বিলকে হাতিয়ার করে ফের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে কোণঠাসা করতে তৈরি তৃণমূল কংগ্রেস।
ওয়াকফ বিল (Waqf Amendment Bill 2024) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিধানসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পাল্টা একটি বিল পেশ এবং পাশ করাবে তাঁর সরকার। তবে সেটি বিল না কী প্রস্তাব আকারে আনা হবে, তা এখনও ধোঁয়াশা।