ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মৃত্যুদণ্ড নয় যাবজ্জীবন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কারাবাসে থাকতে হবে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে (RG Kar Case Verdict) অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজা ঘোষণা করল শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। এছাড়াও সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জরিমানার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ। যদিও ক্ষতিপূরণ নিতে নারাজ নির্যাতিতার বাবা।
১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ (RG Kar Case Verdict)
দোষীর যাবজ্জীবন অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড ছাড়াও সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। নির্যাতিতার বাবা অবশ্য জানান, ক্ষতিপূরণ চান না। তাঁর উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও তাই করতাম।’’ আদালতের এই রায় শোনার পরই নিহত চিকিৎসকের পরিবারের তরফে বলা হয়, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ চাইনি। আমরা মেয়ের খুন বিচার চাই। এই টাকা নিয়ে কী করব’। এর উত্তরে বিচারক বলেন, ‘আমি জানি আপনারা ক্ষতিপূরণ চাইছেন না। কিন্তু আইনে যা বলা হয়েছে সেই মতো এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই টাকা নিয়ে আপনারা কী করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। যেহেতু সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষিত হয়ে খুন (RG Kar Case Verdict) হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী রায় দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: Sanjay Roy Punishment: আরজি কর কাণ্ডে আমৃত্যু কারাদণ্ড সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের
মেয়ের ধর্ষণ-খুনের বিচারে মৃত্যুর দিন থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আরজি কর-এ নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা। মেয়েকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ পরিবারের লক্ষ্য একটাই ছিল- ‘দোষীদের যেন শাস্তি হয়’। এদিন আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারক দাস বলেন, ‘‘আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।’’ আদালতের নির্দেশ শুনে কাঁদো কাঁদো দেখা গেল আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে। বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন তিনি।
সোমবার দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নং কোর্টরুমে শুরু হয় সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া (RG Kar Case Verdict) । আদালতে কক্ষে প্রায় আধ ঘণ্টা সঞ্জয় এবং তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য শুনলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। শোনা হয় নির্যাতিতার পরিবারের বক্তব্যও। প্রথমেই বিচারক সঞ্জয়কে বলেন আপনাকে আগে বলেছিলাম চার্জ আনা হয়েছে, সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। আপনার শাস্তির বিষয়ে কি বলার আছে? ফাঁসানো হয়েছে বলেই দাবি করেন ধৃত সঞ্জয় রায়।
আরও পড়ুন: RG Kar Punishment: সঞ্জয় একা নন অন্তত ৫০ জন জড়িত, দাবি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের
‘আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল, আমি যদি করতাম আমার মালা ছিঁড়ে যেত। আপনি সব শুনেছেন, যেমন যার ইচ্ছা হচ্ছে তাই করছে। যেখানে ইচ্ছা হয়েছে সেখানে সই করানো হয়েছে বলে আদালতে বিস্ফোরক দাবি করেছেন ধৃত সঞ্জয় রায় (RG Kar Case Verdict) । সঞ্জয়ের কথা শুনে বিচারক বলেন, আপনাকে শোনার জন্য গোটা দিন দিয়েছি। ৩ ঘণ্টা ধরে আপনার কথা শুনেছি, আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না কি হয়েছে। সঞ্জয়ের বাড়ির লোক মামলা চলাকালীন যোগাযোগ করেন কিনা প্রশ্ন করেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সঞ্জয় জানান, যোগাযোগ করে না। হেফাজতে থাকাকালীন অত্যাচার করা হয়েছে, বিচারকের কাছে দাবি সঞ্জয়ের।
আরও পড়ুন: Sanjay Roy: সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি CBI-পরিবারের, মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা সঞ্জয়ের আইনজীবী
সিবিআই বিচারককে জানিয়েছে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ এটি। চিকিৎসক ডিউটিতে ছিলেন। শুধু পরিবার এক জন সদস্যকে নয়, এক জন চিকিৎসককে সমাজ হারিয়েছে। কঠিন শাস্তির পক্ষে সওয়াল করা হয়। সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি সিবিআইয়ের আইনজীবীর। সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি পরিবারের আইনজীবীর। ‘সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই’। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা সঞ্জয়ের আইনজীবীর। ‘সমাজ থেকে কাউকে বাদ দিয়ে দেওয়াটা সমাধান নয়, তীব্র বিরোধীতা করছি মৃত্যুদণ্ডের, জানান সঞ্জয়ের আইনজীবী। ‘মামলার এখনও তদন্ত বাকি রয়েছে, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া যে শাস্তি আছে সেই শাস্তি দেওয়া হোক’। সঞ্জয়ের আইনজীবীরা দাবি করেন, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে সওয়াল করেন তাঁরা।