ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পানামার সিদ্ধান্তকে “দারুণ অগ্রগতি” বললেন মার্কো রুবিও (China-Panama Rift)। আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও পানামার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, যেখানে দেশটি জানিয়েছে যে তারা চীনের বিশ্বব্যাপী পরিকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এ তাদের অংশগ্রহণ রিনিউ করবে না।
রুবিও বলেছেন, “এটি আমেরিকা ও পানামার সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং পানামা খালের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য।”
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক জয় (China-Panama Rift)
পানামা যদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প থেকে দূরত্ব বজায় রাখে (China-Panama Rift), তবে এটি আমেরিকার জন্য বড় জয় হবে। ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, চীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলে নিজের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়াতে চায়।
মার্কো রুবিও এই সপ্তাহে আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফরে পানামা যান এবং সেখানে তিনি পানামার উপর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেন (China-Panama Rift)।
পানামার প্রেসিডেন্টের ঘোষণা (China-Panama Rift)
রুবিওর সঙ্গে আলোচনার পর পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেন, তার দেশ চীনের এই প্রকল্পে আর অংশগ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, “আমাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে অংশগ্রহণের চুক্তি রিনিউ করা হবে না, এমনকি এটি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হতে পারে।” যদিও তিনি জানান, এই চুক্তির মেয়াদ এখনও দুই থেকে তিন বছর রয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি (China-Panama Rift)।
রুবিওর প্রতিক্রিয়া (China-Panama Rift)
পানামা ছাড়ার পর মার্কো রুবিও এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লেখেন (China-Panama Rift), “পানামার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন যে তারা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসবে। এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পানামার স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য।”
বিশ্লেষকদের মতামত
নিউইয়র্ক ভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (CFR)-এর সিনিয়র ফেলো ইয়ানঝং হুয়াং বলেছেন, পানামার এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের “ব্রিংকম্যানশিপ কূটনীতি” (চরম উত্তেজনার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি) কৌশলের প্রথম সাফল্য। তবে এটি অন্যান্য দেশেও সহজে বাস্তবায়িত হবে কিনা, তা বলা কঠিন।
তিনি বলেন, “আমেরিকা এখন ল্যাটিন আমেরিকায় নিজেদের প্রভাব আরও বাড়াতে চায়, কারণ এই অঞ্চলের দেশগুলো এখনও আমেরিকার বাণিজ্য ও সমর্থনের উপর নির্ভরশীল।”
আরও পড়ুন: Donald Trump: ২৫% শুল্কে স্থগিতাদেশ ট্রাম্পের, আপাতত রেহাই পেল কানাডা ও মেক্সিকো
তবে তিনি আরও যোগ করেন, “আমেরিকা একইভাবে কোনও এশীয় দেশকে বাধ্য করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ চীন ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ।”
চীনের প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ২০১৭ সালে পানামা ল্যাটিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে যোগ দেয়। তার মাত্র পাঁচ মাস আগেই পানামা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
চীন বরাবরই এই প্রকল্পের সমালোচনার জবাবে বলে আসছে, ১০০টিরও বেশি দেশ এতে যোগ দিয়েছে এবং এটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক
যদিও চীন দাবি করছে যে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নতুন বন্দর, ব্রিজ, রেলপথ ও অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মিত হচ্ছে, তবে অনেক দেশ এই প্রকল্পের উচ্চ খরচ এবং চীনের দেওয়া ঋণের চাপে পড়ে গেছে। ২০২৩ সালে ইতালি, চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগের কারণে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
পানামা খাল নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ
আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরেই পানামা খালের কাছে চীনা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন। পানামা খালটি ২০ শতকের শুরুতে আমেরিকা নির্মাণ করেছিল এবং ১৯৯৯ সালে এটি পানামার হাতে হস্তান্তর করা হয়।
বর্তমানে হংকং-এর একটি কোম্পানি পানামা খালের উভয় প্রবেশপথে দুটি বন্দর পরিচালনা করছে। এছাড়া দুটি চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পানামা খালের উপর দিয়ে চতুর্থ সেতু নির্মাণ করছে। রবিবার আমেরিকার বিদেশ দফতর জানায়, রুবিও পানামার কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্তা পৌঁছে দেন যে চীনের উপস্থিতি পানামা খালের জন্য হুমকি এবং এটি আমেরিকা-পানামা চুক্তির লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: Blast in Syria: সিরিয়ার মানবিজে গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ২০, আহত বহু
পানামার প্রতিক্রিয়া
রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের পর পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার সরকার পানামা খালের প্রবেশপথ পরিচালনার জন্য হংকং-এর CK Hutchison Holdings-এর ২৫ বছরের চুক্তি পর্যালোচনা করতে পারে। এই চুক্তিটি ২০২১ সালে রিনিউ করা হয়েছিল। তবে একটি অডিটের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পানামা সরকার এটিকে বাতিল করতে পারে।
আমেরিকার আশা: চীনা কোম্পানির পরিবর্তে আমেরিকান কোম্পানি
আমেরিকার বিশ্লেষক রায়ান বার্গ, যিনি ওয়াশিংটনের Center for Strategic and International Studies (CSIS)-এর আমেরিকা বিষয়ক বিভাগের পরিচালক, বলেছেন, অডিটের মাধ্যমে পানামা যদি প্রমাণ করতে পারে যে এই চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে, তবে এটি বাতিল করার আইনি সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, “এটি পানামাকে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দেবে এবং নতুন দরপত্র আহ্বান করতে পারবে, যেখানে কোনো আমেরিকান বা ইউরোপীয় কোম্পানি জয়ী হতে পারে।”
আমেরিকা-পানামা সম্পর্ক আরও জোরদার হবে
পানামা সফর শেষে রুবিও এল সালভাদোরে যান, যেখানে তিনি বলেন, পানামার প্রেসিডেন্ট আমেরিকার ভালো বন্ধু এবং পানামা একটি শক্তিশালী মিত্র। তিনি বলেন, “আমরা পানামার সঙ্গে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক চাই না, বরং ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।”
আমেরিকার কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে পানামা এখন চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার পথে এগোচ্ছে, যা আমেরিকার জন্য বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।