ঝুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মামলা, তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে CBI

রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন...

ঝুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মামলা, তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে CBI
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জীবনকৃষ্ণ সাহা, সুবিরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কৌশিক ঘোষ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, আলি ইমামের জামিনের মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও  বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ।তদন্তে দেরি কেন? প্রশ্ন বিচারপতির। রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি চেয়ে সিবিআই যে চিঠি দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের অবস্থান কী। তা রিপোর্ট আকারে আদালতকে জানাতে হবে মুখ্য সচিবকে। এই মর্মে মুখ্য সচিবকে নোটিশ জারি হাইকোর্টের। আগামী ৩ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।

 সিবিআই আইনজীবী অশোক চক্রবর্তী বলেন: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল তিনটে কেসের অনুমোদন দিয়েছে সিবিআইকে। জীবনকৃষ্ণ সাহার একটা কেসে বিধানসভার স্পিকার  অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু এই মামলায় ধৃত সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ২০২২ সালের শেষের দিকে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে সিবিআই। কিন্তু মুখ্য সচিব এখনও সেই চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি। তদন্ত প্রায় শেষ। কিন্তু নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। যেহেতু সরকারের অনুমোদন মেলেনি, তাই সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। 

বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন:  মুখ্য সচিবকে সিবিআই যে চিঠি সিবিআই দিয়েছিল, তা আদালত দেখতে চায়। (সিবিআই আইনজীবী আদালতকে দেখায় সেই চিঠি।) বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন: সৎ সরকারি আধিকারিকদের তদন্তের নামে হয়রানি থেকে রক্ষা করতেই অনুমতি গ্রহণের এই নিয়ম বা আইন রয়েছে।যেখানে আদালত নির্দেশ দিচ্ছে তদন্ত করার এবং রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে তদন্ত নিয়ে সিবিআইকে দেয়া হয়েছে, সেখানে এতো অনুমোদনের কী প্রয়োজন ছিল? যখন আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চলছে, তখন এত অনুমোদনের প্রয়োজন আইন অনুযায়ী ছিল না। অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। এতে দেরি হওয়াটা দুঃখের বিষয়।এতদিনে তদন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। 

 এক বছরে বেশি সময় পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তদন্তকারী সংস্থার দেরি করায় জামিন পেয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। তদন্ত শেষ করতে এত দেরি কেন ? অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে রেখে তাঁকে জিজ্ঞাসা করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। ট্রায়ালে আসামিকে জেলে থাকতে হবে এমন বাধ্য বাধকতা নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় একজন মন্ত্রী ছিলেন। তিনি খুনের আসামি নন, যে তাঁকে হেফাজতে রেখে পুরো তদন্ত শেষ করতে হবে। ট্রায়ালের আগেই অভিযুক্ত তাঁর প্রাপ্য সাজা পেয়ে যাচ্ছেন। তদন্তকারী সংস্থাকে দ্রুততা আনতে হবে তদন্তে। এক বছরের বেশি জেল হেফাজতে রয়েছে এঁরা। এর মধ্যে তদন্ত শেষ করতেই পারতো সিবিআই। কোনও শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা আইন এবং জনগণের বিশ্বাসের উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। আর্থিক দুর্নীতির গুরুত্ব শুধুমাত্র সাজার মেয়াদ থেকে বোঝা যায় না। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, মানুষের আস্থা এবং সমাজের ওপর এর একটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে।

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/ED-arrested-delhi-cm-arvind-kejriwal

তারপরেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী নির্দেশ দেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ট্রায়াল শুরু করার অনুমতি চেয়ে যে চিঠি সিবিআই দিয়েছিল, তার অনুমতি কেন এখনও দেওয়া হয়নি, তা রিপোর্ট আকারে মুখ্য সচিবকে জানাতে হবে।অনুমতি দিতে কত সময় লাগবে, কেন অনুমতি দিতে দেরি হচ্ছে, তা ওই রিপোর্টে জানাতে হবে। আগামী ৩ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।

আরও পড়ুন: https://www.tribetv.in/ISF-declear-the-candidate-name-of-upcoming-poll-2024

উল্লেখ্য, নিয়ম বলছে যদি কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হয়, সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন। আর সরকারি আধিকারিকদের ক্ষেত্রে মুখ্যসচিবের অনুমোদন নিতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জীবন কৃষ্ণ সাহার ক্ষেত্রে সেই অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়দের জন্য মুখ্য সচিব এখনও প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়নি বলেই আদালতে দাবি করেছে সিবিআই।