জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় ধাক্কা রাজ্যের, স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াল হাইকোর্ট

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সেনগুপ্ত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, 'জাতীয় সংগীতকে সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়। এটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। বিস্তারিত জানুন...

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় ধাক্কা রাজ্যের, স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াল হাইকোর্ট
(ফাইল চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: গত ২৯ নভেম্বর বিধানসভা চত্বরে বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংগীত অবমাননার মামলায় স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়াল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত থাকবে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। ওইদিন আদালতে পুলিশকে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। 

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সেনগুপ্ত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, 'জাতীয় সংগীতকে সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়। এটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। আপনারা এটা করবেন না।' এদিনের মামলার শুনানিতে আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কিছুটা দূরে শাসকদলের বিধায়ক, মন্ত্রীরা ধরনা চালাচ্ছিলেন। দুটি ঘটনা প্রায় একই সময়ে চলছিল। জাতীয় সংগীত শুরু হওয়ার মুহূর্তে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান শুরু করেছিলেন এমনটা নয়। তারা আগে থেকেই স্লোগান দিচ্ছিলেন। অন্য দিক থেকে হঠাৎ করেই জাতীয় সংগীত শুরু হয়। গোটা বিষয়টায় আবারও অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, 'এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যদি একপক্ষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তাহলে আপনারা কি সেখানে সকাল থেকে হঠাৎ করে জাতীয় সংগীত বাজিয়ে দেবেন। আর সেই শুনে কি তারা বিক্ষোভ দেখানো বন্ধ করে দেবে!'

বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, অন্য কর্মসূচি থেকে জাতীয় সংগীত শুরু হয়েছিল বলে মামলাকারীর আইনজীবীও স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি বিধায়কদের আইনজীবী। শাসক দলের অভিযোগ তারা অস্বীকার করেনি। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে জাতীয় সংগীত বাজানো হয়েছিল তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিচার্য বিষয়। জাতীয় সংগীত শুরু হওয়ার পর অভিযুক্তরা স্লোগান দিয়েছেন এমনটা নয়। তারা আগে থেকেই স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাই শাসক দলের এই পরিস্থিতিটা বোঝা উচিত ছিল। ওই সময়ে আশেপাশে কী পরিস্থিতি ছিল সেটা দেখেই জাতীয় সংগীত শুরু করা উচিত ছিল।

রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্তের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, 'আপনারা কি মনে করেন, যে কোথাও কোনও গন্ডগোল হচ্ছে, আর সেখানে জাতীয় সংগীত বাজিয়ে দিলে গন্ডগোল থেমে যাবে?' 
গত সোমবার আদালতে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি গোটা ঘটনায় হলফনামা জমা দেওয়ার পাশাপাশি ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ এবং কেস ডায়েরিও তলব করেছিলেন। কিন্তু এদিন রাজ্যের পক্ষ থেকে কোনও হলফনামা বা কেস ডায়েরি আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। এমনকি যে সিসিটিভি ফুটেজ এদিন পুলিশ আদালতে জমা দিয়েছে, তা নিয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। এদিন আদালতে যে সিসিটিভি ফুটেজ জমা দেওয়া হয় তাতে শুধুমাত্র শাসকদলের ধরনার ছবি দেখা গিয়েছে। বিরোধীদলের বিক্ষোভের কোনও ফুটেজ ছিল না। সেই দিখে বিচারপতি সেনগুপ্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এটা কী ধরনের ফুটেজ নিয়ে এসেছে পুলিশ। এক পক্ষের জমায়েত দেখানো হয়েছে। অন্য পক্ষের কোনও ছবি নেই। 

একই সঙ্গে ফুটেজ দেখা না গেলে কী ভাবে বোঝা সম্ভব যে, জাতীয় সঙ্গীতের সময়ই স্লোগান দেওয়া হয়েছিল?'
রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্তের সওয়াল জবাবেও বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, 'হলফনামা জমা দেওয়ার পর আদালত এই মামলা শুনতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের হলফনামা জমা দেওয়ার সময়ই নেই। এই মামলায় আপনাদের অনড় অবস্থান দেখে আমি অবাক হচ্ছি। এই মামলা আপনাদের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সবকিছু ছেড়ে আগে এই মামলা শুনতে হবে! ঠিক আছে তাই করুন। খুন, ধর্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব মামলা ছেড়ে দিচ্ছি। আপনারা সওয়াল চালিয়ে যান। সারাদিন ধরে চলুক এই মামলা। আগামীকালও এই মামলা চলুক। আর অন্য কোনও মামলা আমি তাহলে নেব না।'