অরুণাচলে ভারত-চিন সংঘর্ষ, আগ্রাসন রুখল সেনা

ভারতীয় সেনার দাবি, ভারতের তুলনায় লালফৌজের বেশি সংখ্যক জওয়ান জখম হয়েছেন। তবে সরকারিভাবে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দু’তরফের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

অরুণাচলে ভারত-চিন সংঘর্ষ, আগ্রাসন রুখল সেনা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোতে গেলে বাধা। প্রথমে গায়ের জোর দেখানোর চেষ্টা। কিন্তু তাতে লাভ হবে না বুঝে গালিগালাজ শুরু করে চিনা লালফৌজ। যা শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে গড়ায়। অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াংকাণ্ডে সামনে আসছে একের পর এক নয়া তথ্য। ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দেয় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তাঁরা শোনেননি। উলটে ভারত ও ভারতীয় সেনা সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষায় কুকথা বলতে শুরু করেন লালফৌজের জওয়ানরা। একটা সময় যা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। এর পর আরও আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করলে চিন সেনাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। 

গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচলের তাওয়ানে চিনা সেনার সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ভারতীয় ফৌজ। দু’পক্ষের মধ্যে চলে হাতাহাতি ও পাথরবৃষ্টি। তাতে দু’দেশেরই বেশ কয়েকজন জওয়ান আহত হয়েছেন বলে সেনা সূত্রে খবর। সেনা অফিসারদের দাবি, ওই জায়গায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় নির্দিষ্ট করে সীমানা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। এর আগেও সীমান্তে টহলদারির সময় চিনের তরফে LAC লঙ্ঘনের চেষ্টার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কথা বললেই বিষয়টি মিটে যেত। সঙ্গে সঙ্গে ভুল স্বীকার করে পিছনে চলে যেতেন তাঁরা। গত ৯ তারিখ মোটেই সেই রাস্তায় হাঁটেননি PLA-র জওয়ান ও কমান্ডাররা। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও সমস্যা মেটেনি। উলটে জোর জবরদস্তি শুরু করে দেন তাঁরা।

সেনা সূত্রে খবর, প্রায় ৩০০ জওয়ানের একটি বাহিনী নিয়ে এগিয়ে এসেছিল চিনা লালফৌজ। সংখ্যায় বেশি আছে বুঝতে পেরে দাদাগিরি শুরু করে দেন তাঁরা। বোঝাতে গেলে প্রথম থেকেই ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব দেখাতে শুরু করে PLA। চলে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি। একটা সময় ভারত ও ভারতীয় ফৌজ সম্পর্কে গালিগালাজ শুরু করে দেন তাঁরা। তারপর ভারতীয় জওয়ানদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে এগিয়ে যেতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনা লালফৌজের এটা একটা পুরনো চাল। শত্রুর মনোবল ভেঙে দিতে মাইন্ড গেম খেলতে শুরু করেছিল তাঁরা। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে চিনের সেই ছক বানচাল করে দেন ভারতীয় জওয়ানরা। উলটে পালটা মার দেওয়ায় ধীরে ধীরে পিছু হঠে চিন। অরুণাচলের তাওয়াং সেক্টরে সংঘর্ষে জড়ায় ভারত ও চিনের সেনা। সূত্রের খবর, ৯ ডিসেম্বর তাওয়াং এলাকার এই সংঘর্ষে জখম অন্তত ২০-৩০ জন জওয়ান।

ভারতীয় সেনার দাবি, ভারতের তুলনায় লালফৌজের বেশি সংখ্যক জওয়ান জখম হয়েছেন। তবে সরকারিভাবে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দু’তরফের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। উত্তেজনা প্রশমনে দুই বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডারদের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে বলেও খবর। এর আগে ২০২১ সালে অক্টোবর মাসেও একই এলাকায় ঢুকে পড়েছিল বহু সংখ্যক চিনা সেনা। সেই সময়ও দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধেছিল। তবে সেবার এত মারাত্মক আকার নেয়নি সংঘর্ষ। এবার দু'পক্ষের মধ্যে জোরদার সংঘর্ষ বাঁধে বলেই সূত্রের খবর।

এদিকে ভারত-চিন সীমান্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত করছে মোদি সরকার। মণিপুর লাগোয়া মায়ানমার সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে রেলপথ। অরুণাচল লাগোয়া চিন সীমান্তে দ্রুত সেনাবাহিনী ও যুদ্ধ ট্যাংক পৌঁছে দিতে তৈরি হচ্ছে সড়কপথও। গত নভেম্বরে অরুণাচল প্রদেশে প্রথম গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এহেন পরিস্থিতিতে লালফৌজের আগ্রাসী মনোভাব বেজিংয়ের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিল।