Howrah News: বছরে ন'মাসই জলে ডুবে শোওয়ার ঘর থেকে রান্নাঘর, ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর বেশকিছু এলাকা

১২ মাসের মধ্যে ৩ মাস জল নামলেও বছরের বাকি ৯ মাস জমে থাকা নোংরা জলের মধ্যে দিয়েই নিত্যদিনের কাজ সারতে হয়। বাড়ির একতলা জলের তলাতে থাকে আর তার উপরে তক্তাপোষ পেতে চলে রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া।

Howrah News: বছরে ন'মাসই জলে ডুবে শোওয়ার ঘর থেকে রান্নাঘর, ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর বেশকিছু এলাকা
এ ভাবেই মাসের পর মাস জমা জলের সঙ্গে ঘর করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: কথায় আছে 'নদীর পাড়ে বাস, দুঃখ বারোমাস'। যদিও নদীর পাড়ে বসবাস না করলেও প্রতি বছরের ন'মাস কার্যত জলবন্দি হয়েই জীবন কাটাতে বাধ্য হন হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের চুনাভাটি এলাকার শরৎপল্লী, নবীনগর, রামকৃষ্ণপল্লী এলাকার কয়েকশো পরিবার। নয় মাসের জমা জলের যন্ত্রনা নিয়ে বছরের পর বছর দিন কাটাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। শাসক দল থেকে পঞ্চায়েত হয়ে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দফতরের চক্কর কাটিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। মৌখিক থেকে লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন দফতরে জমার পরও সমস্যার কোনও সুরাহা মেলেনি। 

১২ মাসের মধ্যে ৩ মাস জল নামলেও বছরের বাকি ৯ মাস জমে থাকা নোংরা জলের মধ্যে দিয়েই নিত্যদিনের কাজ সারতে হয়। বাড়ির একতলা জলের তলাতে থাকে আর তার উপরে তক্তাপোষ পেতে চলে রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া। সঙ্গে রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। পানীয় জলের কল নেই বললেই চলে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মতো পরিস্থিতি। শুধু তাই নয়, রাস্তা অবরোধ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চিন্তা ভাবনা নিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। 

দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে বসবাস করছেন মন্টু বাগ। তিনি বলেন,''পাঁচ বছর ধরে এই সমস্যাতে ভুগছি। এলাকার আশেপাশে অপরিকল্পিত বাড়ি, বহুতল নির্মাণের খেশারত দিচ্ছেন। এলাকাতে জল নিকাশীর ব্যবস্থা নেই। বাড়ির একতলা জলের তলায়। তক্তাপোষ পেতে রান্নাবান্নার কাজ করতে হয়। বাচ্চারা এই জল পেরিয়েই স্কুলে যাচ্ছে। সবাইকে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি আমাদের। সকাল সন্ধ্যা মশা, মাছিতে ভর্তি হয়ে গেছে।''  

শুধু তাই নয়, কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে নিয়ে বড় রাস্তা অবধি গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। জ্বর হলে তিনদিন চারদিন ধরে অসুস্থতা থাকছে। খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি আমরা। 

ওই এলাকার বাসিন্দা তপন সামন্ত বলেন, ''পাঁচপাড়া ও থানামাকুয়া দুই পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। ব্লক উন্নয়ন অধিকারিকেও লিখিত জানিয়ে শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি। এলাকার হাইড্রেন পরিষ্কার করার জন্য এলাকার লোকেরা মিলে ২৬ হাজার টাকাও দিয়েছি পঞ্চায়েত সদস্যকে। তাও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এবার আরও উচ্চ স্তরের প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হবো।'' 

শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরাও। যদিও দক্ষিণ হাওড়ার শাসক দলের ব্লক সভাপতি সৈকত চৌধুরী বলেন,'আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। এলাকার বিধায়িকা ও ব্লক অধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধানের উপায় বের করতে হবে। পঞ্চায়েতের বোর্ড তৈরি হয়ে গেলে তারা বিষয়টি দেখবেন। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেও ওই এলাকার উন্নয়নের কাজ করার চেষ্টা করা হবে। আপাতত এলাকাতে যাতে প্রতিদিন মশার স্প্রে ও ওষুধ দেওয়ার কাজ চালু থাকে তার ব্যবস্থা করবো।''

পাশাপাশি বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সূত্রে জানা যাচ্ছে তারা বিষয়টিকে নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। যদিও দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এভাবে জল যন্ত্রণাতে ভুগে আশ্বাসবাণীতে আর ভরসা নেই সাঁকরাইল ব্লকের শরৎপল্লী, নবীনগর, রামকৃষ্ণপল্লী এলাকার কয়েকশো পরিবারের। তাই এই সমস্যা আদৌ সমাধান করা হবে কি না কোনোদিন সেটাই তাদের কাছে এখন বড় প্রশ্ন।