ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: এ এক ভিন্ন আঙ্গিকের কালী মায়ের আরাধনা (Kalipuja 2024)। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাইয়ের চিরকুনডাঙা এলাকায় রয়েছেন কংক্রীটের তৈরি ৪৫ ফুট উচ্চতার বিশালাকার কালী প্রতিমা। যা ভক্তদের কাছে ‘বড়মা’ নামেই পরিচিত। এবছর বড়মায়ের পুজো ২৪ বছরে পদার্পণ করবে। শুধু চন্দ্রকোনা নয় জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা এমনকি ভিনরাজ্যের মানুষও এই কালী মাকে বড়মা নামেই জানে।
ক্ষীরপাই এর বড়মার পুজোর অপেক্ষায় থাকে অগনিত মানুষ। পুজোর সময় স্থানীয় আশপাশের মানুষ ছাড়াও জেলা ও ভিন জেলার দুরদুরান্তের মানুষও ভিড় জমায় ক্ষীরপাই বড়মার পুজোয়। শশ্মানকালী হলেও এপুজোয় বলি হয়না। সমস্ত রীতি মেনেই এখানে পুজো হয়। পুজোর পরের দিন হাজার হাজার মানুষ আসে মায়ের খেচুড়ি প্রসাদ খাওয়ার জন্য। ২৩ বছর আগে শশ্মানের উপর বড়মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ওই এলাকারই বাসিন্দা শুদ্ধদেব রায়। প্রথমে মাটির চালায় প্রতিমা তৈরি করে পুজোর শুরু করেন প্রতিষ্ঠাতা শুদ্ধদেব রায়। যা ছোটো মা নামেই ডাকা হয়।
আরও পড়ুন: এখানেই রয়েছে সতীর দক্ষিণ স্কন্ধ, পরতে পরতে ইতিহাসে মোড়া রত্নাবলী কালীপুজো
আরও পড়ুন: সাধক বামাক্ষ্যাপার বংশধরের হাতে পুজোর সূচনা! আজও ঐতিহ্য মেনে পুজো হয় বন্দর কালীবাড়িতে
তবে বন্যা কবলিত এলাকা হওয়ায় একবার বন্যায় ছোটো মায়ের মাটির চালা ডুবে গিয়ে মুর্তি ভেঙে যায়। যদিও মায়ের একটি ভাঙা হাত রয়ে গিয়েছিল যা এবারের বন্যায় তলিয়ে যায়। বন্যা মিটতেই ছোটো মায়ের মন্দিরের সাথে মূর্তি তৈরির কাজ চলেছে জোরকদমে। ছোটো মায়ের পাশেই ৪৫ ফুট উচ্চতার কংক্রীটের মায়ের মুর্তি রয়েছে। যা জেলা কেনো রাজ্যও এতো বড় মাপের কালী প্রতিমা নেই বলেই মত প্রতিষ্ঠাতা থেকে ভক্তদেরও। সবার কাছেই তাই ক্ষীরপাই বড়মা নামেই পরিচিত।
অমাবস্যা তিথি ও কালীপুজোর সময় ছাড়া বড়মায়ের মন্দিরে থাকেনা কোনও পূজারী। তিথির সময় ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্তের অগনিত মানুষ মায়ের দর্শনে আসেন। তারা নিজেরাই নিজের মতো করে মায়ের পুজো দিতে পারে পুরোহিত ছাড়াই। ভক্তদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় মন্দিরের পুজো-আর্চনার কাজ। যে যার নিজের মতো করে নিজে হাতে পুজো দেয় বড়মাকে। আর এজন্যই প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম লেগেই থাকে। বিশালাকার কালী মন্দিরের বৈশিষ্ট্য নজরকাড়ে সকলেরই। কোনও আর্থিক সাহায্য কিংবা দক্ষিণা নেওয়া হয়না ভক্তদের থেকে। কোনও প্রণামী বক্সের ঠাই নেই মন্দিরে।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে মেঘমুক্ত আকাশ, কালীপুজোর পরই শীতের আগমন শহরে!
আরও পড়ুন: প্রায় ১০০ বছর ধরে শক্তি আরাধনা, তুঙ্গে প্রস্তুতি কৃষ্ণনগর মংলাপাড়া বারোয়ারির
অনেক ভক্তের দাবি মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তা পূরণ হবেই। বিভিন্ন রোগ-নিরাময়ের জন্যও অনেকে মায়ের স্মরনাপন্ন হয় এবং অনেকের দাবি তাতে বিমুখ হয়নি কেউ। ‘অর্থের বিনিময়ে নয় নিজে হাতে পুজো করুন মাকে যাচাই করুন’ মন্দিরে লেখা এমনই বানী চোখে পড়বে সকলের।
বিশালাকার কংক্রীটের বড়মায়ের এক হাতে রয়েছে পৃথিবী, আর এক হাতে রয়েছে সাদা পায়রা। বাকি দুই হাতে কারতান ও মুণ্ডচ্ছেদ। মায়ের রুদ্র রুপের পাশাপাশি, ধরিত্রীর রক্ষাকর্তা ও শান্তির বাহক হিসেবে একহাতে পৃথিবী ও অপর হাতে পায়রা রয়েছে বলে জানা যায়। কালীপুজোর দিন বড়মার মন্দিরে হাজারও ভক্তসমাগম হয়ে থাকে। বড়মার পুজোয় বলি হয়না, তবে পাশে মাটির চালায় ছোটো মায়ের পুজোয় বলি হয়। বলির মাংস প্রসাদ হিসাবে পরদিন খেচুড়ি প্রসাদে মিশিয়ে দিয়ে ভক্তদের খেচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়।