শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সাঁতরাগাছি সেতু মেরামতির কাজ, বিপাকে নিত্যযাত্রীরা

শুক্রবার সেতু সারাই এবং যান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে হাওড়া পুলিশ কমিশনারের অফিসে বিশেষ বৈঠক হয়।

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সাঁতরাগাছি সেতু মেরামতির কাজ,  বিপাকে নিত্যযাত্রীরা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: শনিবার থেকে একটানা প্রায় দেড় মাসের জন্য বন্ধ হতে চলেছে সাঁতরাগাছি সেতু। সেতু বন্ধের জেরে দুর্ভাগে পড়তে পারেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে আলোচনার পর অবশেষে শনিবার থেকে সাঁতরাগাছি সেতু মেরামতির কাজ শুরু হবে। যার ফলে আগামীকাল অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর সকাল থেকে সাঁতরাগাছি সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হবে।

 জানা গিয়েছে, শুক্রবার সেতু সারাই এবং যান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে হাওড়া পুলিশ কমিশনারের অফিসে বিশেষ বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়,  ১৯ নভেম্বর রাত ১১টা থেকে পরের দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হবে এই সেতু। এছাড়াও ওই দিন ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কলকাতাগামী একমুখী লেন খোলা রাখা হবে। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এই কাজ চলবে গোটা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। যারফলে আগামী প্রায় দেড় মাস ধরে যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

শুক্রবার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রভীন ত্রিপাঠি সহ ট্রাফিক বিভাগের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। যে ক'দিন ব্রীজ মেরামতির কাজ চলবে সেই ক'দিন কোনও পণ্যবাহী ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না সেতুর উপর দিয়ে। সেক্ষেত্রে পণ্যবাহী ট্রাক রাত ১০'টার পর কলকাতার দিক থেকে চলাচল করতে পারবে। দ্বিতীয় সেতুর টোল প্লাজা পেরিয়ে আন্দুল রোড হয়ে জাতীয় সড়কের উদ্দেশ্যে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। অপরদিকে পণ্যবাহী ট্রাক কলকাতায় ঢুকতে রাত্রি দশটার পর নিবেদিতা সেতু হয়ে। যদিও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৯ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নিয়ম মেনে ট্রাফিক মুভমেন্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁতরাগাছি সেতুর কলকাতা অভিমুখে ২১টি একপানশন জয়েন্ট খারাপ হয়েছে। প্রথমে সেগুলো ঠিক করা হবে। যদিও এর আগে ২০১৬ সালে সেতুতে সাঁতরাগাছি অভিমুখী লেনের একপানশন জয়েন্ট সরানো হলেও কলকাতা অভিমুখী লেনের কাজ হয়নি। এই সেতু হয়ে প্রতিদিন প্রায় সত্তর হাজার গাড়ি চলাচল করে। যার দরুণ সেতুর  স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পরীক্ষা করে দেখা হয়।  আর খারাপ হওয়া একপ্যানশন জয়েন্ট ঠিক না করলে বড়সড় দুর্ঘটনা সম্ভবনা রয়েছে। হাওড়া ও কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ৭০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। আর এই তথ্য সামনে আসার পরই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে  নবান্নের। 

সেতু বন্ধের খবর প্রকাশ্যে আসতেই এখন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। এই দেড় মাস ধরে চলবে সেতুর মেরামতি করার কাজ। ইতিমধ্যেই ওই রাস্তা ব্যবহারকারি  গাড়ির উপরে সমীক্ষা করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সমীক্ষায় প্রকাশ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক ৭০ হাজার গাড়ি চলে। যদিও গোটা প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এবং সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৮০০ পুলিশকর্মী মোতায়েত করা হবে বলেই ট্রাফিক সূত্রের খবর।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গার্ডরেল ও ভ্যান রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কোনও সমস্যা হলে এবং যানজট হলে সহজেই তাঁর মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠি জানান, যেহেতু অন্য কোনও বিকল্প নেই। তাই আন্দুল রোডকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্ত দফতর থেকে আন্দুল রোডের রাস্তায় প্যাচ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। তাঁরা আশাবাদী দেড় মাসের মধ্যেই সেতু সারাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে। 

উল্লেখ্য, গুজরাটের মোরবিতে ঝুলন্ত সেতুর দুর্ঘটনা থেকে আগাম শিক্ষা নিয়ে এবার রাজ্যের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে নজর দিয়েছে নবান্ন। দ্রুততার সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুরোনো ও ব্যাস্ত সেতুগুলোর হালহকিত জানতে সেগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আবার ছয় বছর বাদে রাজ্য পূর্ত দফতর ও কেএমডি–এর ইঞ্জিনিয়াররা  সেগুলিকে ফের মেরামতির প্রয়োজন আছে বলেই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। 

এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরেই সাঁতারাগাছি সেতুকে চার লেনের সেতুতে পরিণত করার পরিকল্পনা এখনও বিশ বাঁও জলে পড়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জায়গাতে অদূর ভবিষ্যতে যদি ওই চার লেনের সেতু নির্মাণের কাজ রাজ্য সরকার শুরু করতে পারে সেক্ষেত্রে নিত্যযাত্রী সহ ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের কষ্ট অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও সেতুর এই সম্প্রসারণের কাজের জন্য আটকে রয়েছে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো বাবুঘাট থেকে সাঁতরাগাছিতে বাস স্ট্যান্ড সরিয়ে আনার কাজও।