বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী, অনূর্ধ্ব ১২ ইন্ডিয়ান বেবি লিগে সুযোগ পেয়ে তাক লাগাল ছেলে

দু'জনেরই বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সংসারে অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। অবশ্য অভাবের মধ্যেও জীবনে বড় হয়ে ওঠার ইচ্ছা রয়েছে ভীষণভাবে।

বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী, অনূর্ধ্ব ১২ ইন্ডিয়ান বেবি লিগে সুযোগ পেয়ে তাক লাগাল ছেলে

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল:অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত ইন্ডিয়ান বেবি লিগে অনূর্ধ্ব ১২ বয়সের বিভাগে এবার রাজ্যস্তরে খেলার সুযোগ পেলো দুই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের দুই ছেলে। নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের আরবান্দি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচপোতা গ্রামের বাসিন্দা অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়সী দু'জনের নাম রাজ শেখ ও আনোয়ার শেখ। 

দুজনেই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। দুজনেরই বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। সংসারে অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। অবশ্য সেই অভাবের মধ্যেও জীবনে বড় হয়ে ওঠার ইচ্ছা রয়েছে ভীষণভাবে। আর তাই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রবল ইচ্ছা তাদের। সেই ইচ্ছেকে বাস্তবের রূপদান করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওই গ্রামের অমিত সর্দার এবং তার সহযোগী হাসান মন্ডল নামের এক যুবক। পাঁচপোতা তরুণ সংঘের মাঠে তারা মাস ছয়েক আগে শিশু-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলে একটি ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে তারা ছেলেমেয়েদের ফুটবল কোচিং দেওয়া শুরু করেন। আদিবাসী এবং পার্শ্ববর্তী সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার মেয়েরাও বর্তমানে সেই কোচিং ক্যাম্পে ফুটবল শিখছে। 

রাজ এবং আনোয়ার সেখানেই ফুটবল কোচিং নিয়ে নিজেদের খেলায় দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়ান ফুটবল লীগের কোচিং ক্যাম্পের একজন কোচ শান্তিপুর পাঁচপোতা তরুণ সংঘের মাঠে অমিতদের কোচিং ক্যাম্পে এসে হাজির হয়েছিলেন। এরপর প্রমোদনগরের মাঠে শুরু হয় বাছাই পর্ব একটি খেলা। সেখানেই ভালো খেলে রাজ এবং আনোয়ার ইন্ডিয়ান ফুটবল লীগের জেলাস্তরের খেলায় খেলার সুযোগ অর্জন করে। 

তারা দুজনেই জানিয়েছে,'পড়াশোনার সঙ্গে তারা ক্যাম্পে গিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস করে। আগামী দিনে তারা আরও ভালো  খেলে রাজ্য এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করতে চায়। অমিত সর্দার বলেন, ''তরুণ সংঘের মাঠে মাসছয়েক আগে আমি এবং সহযোগী হিসেবে হাসান দুজন মিলে একটি কোচিং ক্যাম্প শুরু করি। সেখানে গ্রামের সাত আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোররাও ওই কোচিং ক্যাম্পে এসে ফুটবল শেখা শুরু করে। ধীরে ধীরে তাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। যদিও আমরা এখনও পর্যন্ত ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলার জন্য সরকারি কোনও সহযোগিতা পাইনি। ক্লাবে খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম তেমন নেই। তবুও আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে ছেলেমেয়েদেরও আমরা ফুটবল খেলার কোচিং দিচ্ছি। সেখানে কোচিং নিয়ে রাজ এবং আনোয়ার এ বছর অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত ইন্ডিয়ান বেবি লিগে রাজ্যস্থরে বাছাইপর্বে চান্স পেয়েছে। এটা গর্বের বিষয় ।আমরা চাই, আগামী দিনে কন্যাশ্রী কাপে আমাদের কোচিং ক্যাম্পের মেয়েরা যেন খেলার সুযোগ পায়।'' 

জানা গিয়েছে, রাজ শেখের মা সুলেখা বিবি ও আনোয়ারের মা ময়না বিবি দুজনেই বাড়িতে হস্ত চালিত তাঁত চালান। সংসারের হাল ধরার জন্য। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায়, প্রথমদিকে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেদের খেলার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। 

দুজনেই জানিয়েছেন,'ওদের আমরা প্রথম দিকে বারন করেছিলাম। যদিও ওরা নিজেদের উদ্যোগেই খেলার জন্য মাঠে ছুটে যেত। এখন ওরা এই যে একটা সুযোগ পেয়েছে তাতে আমাদের উৎসাহ বেড়েছে। আগামী দিনে আমরা ছেলেদের খেলার জন্য আরও উৎসাহ দেব।'

স্থানীয় আরবান্দি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আলতাব হোসেন শেখ বলেন,''তরুণ সংঘের মাঠে কোচিং নিয়ে রাজ এবং আনোয়ার যে ভালো খেলার সুযোগ পেয়েছে, তাতে আমরা গর্বিত। আমরা চাই ,এখানকার আরও ছেলেমেয়ে ফুটবল খেলার জগতে বড় হয়ে উঠুক। কোচিং দেওয়ার জন্য যাতে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়, আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়, তার জন্য আমরা চেষ্টা করব।'' পাঁচপোতা তরুণ সংঘের সদস্য মুন্না মল্লিক জানিয়েছেন,''সরকারি আর্থিক কিছু সহযোগিতা পাওয়া গেলে আরও ছেলেমেয়ে বড় জায়গায় খেলার সুযোগ পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।''