খলিস্তনি কর্মকাণ্ডে ট্রুডো সরকারের মদতের অভিযোগ! কানাডিয়ানদের ভিসা নিয়ে বড় পদক্ষেপ

খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের ঘটনায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা 'র'-এর ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে সোমবার অভিযোগ করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

খলিস্তনি কর্মকাণ্ডে ট্রুডো সরকারের মদতের অভিযোগ!   কানাডিয়ানদের ভিসা নিয়ে বড় পদক্ষেপ
জাস্টিন ট্রুডো ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ছবি সৌজন্যে-টুইটার)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: বিশ্বের অন্যতম দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে কূটনৈতিক উত্তেজনার পারদ। এই আবহে কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া সিদ্ধান্ত নিল বিদেশ মন্ত্রক। গত জুন মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় খলিস্তানি নেতা তথা কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের। অনেক আগেই তাকে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। সম্প্রতি তার হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আর তারপর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। 

গত কয়েক বছর ধরে কানাডার মাটিতে খলিস্তানি কর্মকাণ্ড এবং ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড ক্রমেই বাড়ছে। এই নিয়ে ভারত সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, সেই সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন ভূমিকায় দেখা গিয়েছে ট্রুডো সরকারকে। ট্রুডো প্রশাসনের সরকারি নীতি হল, কানাডা এক গণতান্ত্রিক দেশ। তাই, যতক্ষণ পর্যন্ত খলিস্তানিরা তাদের আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না সরকার। শুধুমাত্র ভারতীয় কূটনীতিক এবং কানাডায় ভারতের কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে কোনও হুমকি তৈরি হলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ট্রুডো সরকারের এই নীতি গ্রহণের পিছনে অবশ্য রয়েছে রাজনৈতিক কারণও।

প্রথমবার যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো, সেই সময় বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই দিন আর নেই। তাঁর জনপ্রিয়তা হু-হু করে কমছে। করোনা মহামারির সময়, তাঁর সরকারের করা পদক্ষেপগুলির জোরে হাউস অব কমন্সে সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তাঁর লিবারেল পার্টি। এমনটাই মনে করেছিলেন ট্রুডো। এই ভাবনা থেকে ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে আগাম নির্বাচনে গিয়েছিলেন। বিরোধীরা কোভিডের মধ্যে ভোট করা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু ট্রুডো শোনেননি। ফলাফল অবশ্য প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এদিকে কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক টানাপড়েনের আবহে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভিসার উপর এই বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে।

কানাডার মাটিতে সে দেশের খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের ঘটনায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা 'র'-এর ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে সোমবার অভিযোগ করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ট্রুডোর ওই বিবৃতির পরই কানাডার এক ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। ট্রুডো সরকারের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি অভিযোগ করেন, ওই ভারতীয় কূটনীতিক আদতে র-এর আধিকারিক। ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার মোদী সরকার কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি, নিজ্জর খুনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করে ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরোধী শক্তিকে কানাডা মদত দিচ্ছে বলেও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়। টানাপড়েনের এই আবহেই বুধবার কানা়ডার উপর চাপ বাড়িয়ে কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করে নয়াদিল্লি। কানাডার স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের। আর এরপরই বৃহস্পতিবার আরও একধাপ এগিয়ে এবার কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি পদক্ষেপ করতে চলেছে ভারত সরকার।

জানা গিয়েছে, খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতীয় উদ্বাস্তুও নয়। তারা কানাডার নাগরিক। দেশের মাটিতে তাদের ভারত বিরোধী কাজ চালিয়ে যেতে দিয়ে, ট্রুডো সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এই অবস্থায় দেশিয় রাজনৈতিক স্বার্থে কূটনৈতিক সম্পর্ক জলাঞ্জলী দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক মহলে। এখন দেখার এই দুই রাষ্ট্রের টানাপোড়নের জল কোন দিকে গড়ায়!