টেট ইন্টারভিউ দিয়েও অধরা চাকরি, সংসারের হাল ধরতে সবজি বিক্রি বাপির

ছ'বছর আগে পাশ করা টেট পরীক্ষার ইন্টারভিউ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তারপরেও চাকরি জোটেনি। পেট তো চালাতে হবে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সবজি বিক্রি।

টেট ইন্টারভিউ দিয়েও অধরা চাকরি, সংসারের হাল ধরতে  সবজি বিক্রি বাপির
টেট উত্তীর্ণ বাপি দাস (নিজস্ব চিত্র)

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: সংসারের হাল ধরতে বাজারে সবজি বিক্রি। দু'বার টেট পাশ করেও মেলেনি চাকরি।  একপ্রকার বাধ্য হয়েই হাটে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে নিরুপায় বাপি দাসকে। জানা গিয়েছে, টেট পাশের পর একবার ইন্টারভিউও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু শিক্ষকের চাকরি আজও অধরা। সংসারের হাল ধরতে তাই আজ হাটে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাঁকে। ভাগ্যের পরিহাসে হবু শিক্ষক এখন সবজির দোকান সামলাচ্ছেন প্রতিদিন।  
  

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের কামারপাড়ার ডুমইর গ্রামে বাড়ি বাপি দাসের। ২০১৭ সালে প্রাথমিক টেটে তিনি ৯৫ নম্বর পেয়ে পাশ করেন। এরপর ২০২২ সালের পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ১০৫। জানা গিয়েছে, ছ'বছর আগে পাশ করা টেট পরীক্ষার ইন্টারভিউ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তারপরেও চাকরি জোটেনি। পেট তো চালাতে হবে। এখন কামারপাড়া বাজার ও হাটে গেলেই সবজির পসরা সাজিয়ে বাপির দেখা মেলে। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে নিজেই ভ্যান চালিয়ে সবজি নিয়ে আসেন হাটে। তারপর সারাদিন চলে বেচাকেনা। 

 ২০১১ সালে বাদামাইল এলপি হাই স্কুল থেকে ৫৮৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন বাপি দাস। উচ্চমাধ্যমিকেও ৮১ শতাংশ নম্বর পান। তারপরেই প্রাথমিক শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হন কুরমাইলের সরকারি ডিএড কলেজে। পরে বাংলায় সাম্মানিক স্নাতকে ৬৪শতাংশ ও স্নাতকোত্তরে ৮৫ শতাংশ নম্বর তাঁর। বাবা বিপুলচন্দ্র দাস একজন সাধারণ কৃষক। মা কল্পনা দাস গৃহবধূ। পরিবারের একমাত্র তিনিই পুত্র সন্তান। তার দিদি দীপা দাসের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন সংসারের হাল ধরার একমাত্র মানুষ বাপি। যদিও সবজি বিক্রির পাশাপাশি তিনি গ্রামের পড়ুয়াদের টিউশন পড়ান। যেখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

 প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী তথা সবজি বিক্রেতা বাপি দাসের বলেন, ''সবজি বিক্রি করে কোনও শিক্ষকের কাছে পড়তে যেতে পারতাম না। দোকানে বসেই মোবাইলেই বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে পড়াশোনা করতাম। বাড়ি ফিরে রাতে কিছু বিষয় পড়তাম। অন্যের দুর্নীতির খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। বিচারব্যবস্থায় তোড়জোড় দেখে সুদিন ফিরবে ভেবেছিলাম। সেখানেও আশার আলো ক্ষীন হয়ে আসছে। ছয় বছর আগে টেট পরীক্ষায় পাশ করেছি। এই বছর তার ইন্টারভিউ দিলাম। গত বছর পরীক্ষায় পাশ করার পর তার কোনও খবর নেই। এইভাবে আমাদের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।''  তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে সরকারের দেখা উচিত বলে দাবি করেছেন দু'বারের টেট উত্তীর্ণ বাপি দাস।