ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জ্যোতিষ শাস্ত্রে নয়ে নবগ্ৰহ! তবে সৌর জগতের গ্ৰহ সংখ্যা কিন্তু ৮। আর প্লুটো সহ বামন গ্রহ রয়েছে ৫টি। কিন্তু নাসার একটি গবেষণা বলছে,আমাদের সৌর জগতে আরো একটি গ্ৰহ থাকতে পারে (Planet X)। যাকে অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার উপস্থিতি বোঝা যাচ্ছে। এই জন্যই এই গ্ৰহটির নাম দেওয়া হয়েছে প্লানেট এক্স বা প্লানেট নাইন। কী এই প্লানেট নাইন? আর কীভাবেই বা তার উপস্থিতি বোঝা গেল?
কী এই প্লানেট এক্স? (Planet X)
বিজ্ঞানীরা সৌর জগতের একটি অদৃশ্য গ্ৰহের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছেন (Planet X)। যে গ্ৰহটিকে দেখা যাচ্ছে না। তবে গ্ৰহটির উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে। একেই প্লানেট এক্স বা প্লানেট নাইন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই প্লানেট নাইনের আকার পৃথিবীর চেয়ে ৫ থেকে ৭ গুন বেশি, এবং এটি পৃথিবীর থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি ভারী।
কোথায় রয়েছে এই প্ল্যানেট এক্স? (Planet X)
আমাদের সৌর জগতের বিস্তার প্রায় ৫০০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (Planet X)। এক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিটের অর্থ পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব। ভাবতে পারছেন, কতটা বিশাল আমাদের এই সৌর জগৎ। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, প্লানেট নাইনের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৬০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরে। পৃথিবী থেকে সৌর জগতের শেষ গ্ৰহ নেপচুনের দূরত্ব মাত্র ৩০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। আর এই অদৃশ্য গ্ৰহ প্লানেট নাইন পৃথিবী থেকে ৬০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট দূরে অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ,এটি পৃথিবী থেকে সূর্যের যে দূরত্ব তার চেয়ে ৬০০ গুণ বেশি দূরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: New Year party: রেস্তোরাঁ কিংবা পাবে নয়, বাড়িতেই আয়োজন করুন নিউ ইয়ার পার্টির
কীভাবে বোঝা গেল প্ল্যানেট এক্সের উপস্থিতি?
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে প্ল্যানেট নাইন বা প্লানেট এক্স একটি বিতর্কিত বিষয়। কিছু বিজ্ঞানী এই অদৃশ্য গ্ৰহের উপস্থিতি স্বীকার করেন আবার কিছু বিজ্ঞানী উপস্থিতি স্বীকার করেন না। তবে সৌর জগতের গ্ৰহগুলির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে,কুইপার বেল্ট ও প্লুটো সহ বামন গ্রহ গুলির উপর একটি অদৃশ্য গ্ৰহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব পড়ছে। এমনকি ওই অদৃশ্য গ্ৰহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ইউরেনাস ও নেপচুনের মতো গ্যাস জায়েন্ট প্ল্যানেটও নিজের পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। কিন্তু, এই গ্ৰহটির উপস্থিতি অনুভব করা গেলেও সেটিকে দেখা যাচ্ছে না।
কে প্রথম প্ল্যানেট এক্সের উপস্থিতি অনুভব করেন?
১৯০৬ সালে একজন আমেরিকান ম্যাথেমেটিশিয়ান ও মহাকাশবিদ পার্সিভাল লোয়েল প্রথম সৌর জগতের নবম গ্ৰহের উপস্থিতির কথা সামনে এনেছিলেন। তিনি লক্ষ করেন, সৌর জগতের দুটি গ্যাস জায়েন্ট প্ল্যানেট ইউরেনাস ও নেপচুনের অরবিটাল স্পীড তাঁর গননার চেয়ে বেশ খানিকটা কম। তিনি অনুমান করেন, কোনো বিশাল আকারের গ্ৰহের মার্ধ্যাকষণ বল এই গ্ৰহ গুলির উপর প্রভাব ফেলছে। যদিও তখনও প্লুটো আবিস্কৃত হয়নি। প্লুটো আবিষ্কারের পর এই জল্পনা কিছু সময়ের জন্য থেমে যায়। তবে যখন বোঝা যায় প্লুটো নিজের কক্ষপথে থাকা ছোট্ট অস্টোরয়েড গুলির উপরের প্রভাব ফেলতে পারছে না তখন আবারও জল্পনা শুরু হয়।
একের পর ছোট্ট গ্রহ আবিষ্কার
এই প্ল্যানেট নাইনের খোঁজ করতে গিয়ে একের পর এক ছোট প্ল্যানেট আবিষ্কার হয়। কিন্তু এদের আকার এতই ছোট যে এরা নিজের কক্ষপথে আসা অ্যাস্ট্রোয়েড গুলোর উপরেও খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। এজন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একাংশ যারা এই প্ল্যানেট নাইনের খোঁজ করছিলেন তারা মনে করেন এগুলো মধ্যে একটিও সেই প্ল্যানেট নাইন নয়। কেননা, এদের মধ্যে এত বিশাল মার্শ নেই যে তাঁরা ইউরেনাস ও নেপচুনের মতো গ্যাস জায়েন্ট-কে নিজের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে! এই ছোট্ট গ্রহ গুলোকে পরে বামন গ্রহের শ্রেণীতে রাখা হলো।
‘ভয়েজারের অবজারভেশন’
গোটা সৌর জগতকে আরো কাছ থেকে অবজার্ভ করার জন্য ভয়েজার -১ ও ভয়েজার -২ নামে দুটি মিশন লঞ্চ করে নাসা। কিন্তু সেই মিশনেও সৌর জগতের দুটি গ্যাস জায়েন্ট প্ল্যানেট ইউরেনাস ও নেপচুনের উপর অন্য একটি বড় গ্ৰহের প্রভাব ধরা পড়ে। কিন্তু ওই বড় গ্ৰহকে আজ পর্যন্ত দেখা সম্ভব হয়নি।