ছেলেরা কোটিপতি, ঠাঁই নেই মায়ের রাস্তায় ঘুরছেন জ্যান্ত দুর্গা

স্বামী মনোরঞ্জন দত্তের ‌মৃত্যুর পর বিগত দেড় বছর ধরে পথে পথে ঘুরে বেরাতে হচ্ছে তাঁকে।

ছেলেরা কোটিপতি, ঠাঁই নেই মায়ের রাস্তায় ঘুরছেন জ্যান্ত দুর্গা

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল: নচিকেতার বিখ্যাত 'বৃদ্ধাশ্রম' গানে ফ্ল্যাটে বৃদ্ধা মায়ের জায়গা হয়নি। গানের সীমারেখা পার হয়ে বাস্তবে সেই সংখ্যা কংক্রিট আর ইমারতে গড়া শহরে বন্যার জলের প্লাবিত করেছে সমস্ত শহর। তবে মফস্বলেও ইদানিং তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

নদীয়ার শান্তিপুর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিশ্চিন্তপুর শরৎ লেনের বাসিন্দা সন্ধ্যারানী দত্ত। স্বামী মনোরঞ্জন দত্তের ‌মৃত্যুর পর বিগত দেড় বছর ধরে পথে পথে ঘুরে বেরাতে হচ্ছে তাঁকে। কারণ, দুই ছেলে কোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের ঘরে মায়ের জায়গা নেই। এমনকি ঠাই হয়নি স্বামীর পৈত্রিক ভিটেতেও। বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, বড় ছেলে তাপস দত্ত তাঁকে রীতিমতন শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালাত দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি সম্প্রতি একটি স্টোর রুমে তালা দিয়ে আটকে রাখার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন গর্ভধারিনী মা। অবশ্য সেদিনের ঘটনায় কাউন্সিলর সঞ্জয় করকে ফোন করে সে যাত্রায় উদ্ধার হন তিনি। 

জানা গিয়েছে, সেদিনের ঘটনা পর থেকেই তিনি ছোটো ছেলে দেবু দত্তর ব্যবস্থায় ভাড়া থাকেন অন্যত্র। যদিও ছোটো ছেলে দেবু দত্তের উপর কিছুটা আস্থাশীল বৃদ্ধা মা। তিনি বলেন, ''ও শ্বশুর বাড়িতে থাকে, তাই আমাকে স্থায়ীভাবে রাখার বন্দোবস্ত করতে পারেনি। দেবুকে দিয়ে যাওয়া ওর বাবার জমি বিক্রি করতে পারলে হয়ত কিছু ব্যবস্থা করতে পারবে। তবুও কিছুটা খোঁজ খবর নেয়, কিন্তু বড় ছেলে তাপস ওই জমি বিক্রি করতে ছোট ছেলেকে বাধা দিচ্ছে। 
কথায় আছে ভাগের মা গঙ্গা পায় না!'' 

অন্যদিকে নিজেদের কাজে অনুতপ্ত না হয়ে তাঁরা বরং একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ মত্ত। বৃদ্ধার বড় ছেলে তাপস  দত্ত বলেন, ''মায়ের খাওয়া খরচা বাবদ কিছু দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে বাড়িতে আশ্রয় কখনই নয়। এই জায়গা দানপত্র করা থাকলেও তা আইনি খরচ বাঁচানোর জন্য প্রকৃতপক্ষে উপযুক্ত অর্থ দিয়ে কিনে নিয়েছিলাম বাবার কাছ থেকে। অপর অংশ সম্প্রতি শুনতে পেয়েছি ভাইকে দানপত্র করেছে। কিন্তু তার আগেই আমাকেও দানপত্র করেছে সে প্রমাণ আছে। আইনেই বিচার হবে।''

 দেবু দত্ত বলেন, ''বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন তিনিও, বাবাকে জোর করে দানপত্রে সই করিয়েছে দাদা। দূর থেকে হলেও মায়ের যাবতীয় খরচ বহন করতে রাজি।'' 
স্থানীয় কাউন্সিলর প্রতিনিধ সঞ্জয় কর বলেন, বেশ কয়েকবার দুই ভাইকে একসঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেছিলাম, তাদের জেদের জন্য সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে দেখেছি বিষয়টি পারিবারিক, তাই মানবিকভাবে খারাপ লাগলেও কোন উপায় ছিল না মীমাংসার।''  

এদিকে সম্প্রতি গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে শান্তিপুর থানার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ''আইনি বিচারে আশা রাখি বিষয়টি নিশ্চয়ই নিষ্পত্তি হবে। 
৬২ বছরের বৃদ্ধা সন্ধ্যারানী দত্তর আক্ষেপ, নানান ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিল তিল করে সন্তান মানুষ করার পর এই ফল কখনো আশা করিনি। তাহলে সে সময় দুই ছেলেকে জমি ভাগে বাধা দিতাম , স্ত্রী হিসেবে আমার নামেই থাকতো। কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা সত্ত্বে ও মায়ের দুবেলা দুমুঠো ভাত দিতে, অস্বীকার করা সন্তানের বিরুদ্ধে আইনি সহযোগিতা চাইতে বাধ্য হয়েছি। ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহ দেখছে শান্তিপুর থানা পুলিশ, এমনকি জেলাশাসক মহকুমা শাসক পর্যন্ত বিষয়টি হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে ধারণা এক অংশের সচেতন